সম্পাদকীয়

১.
আমরা প্রতিনিয়ত দেখি। পরিবার, প্রেম, ডিভোর্স, জঙ্গি, ফেসবুক, শেয়ার বাজার, নির্বাচন, এশিয়ান হাইওয়ে, টিপাইমুখ, পিলখানা, পথশিশু, হকার, মসজিদের জুতাচোর, ব্যাংকের ঋণখেলাপি, অন্ধকার রাস্তার প্রস্টিটিউট, সর্বোপরি একটি ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন এখন আমাদের নিত্য দিনের দেখার বিষয়। ইনকামিং-এ ফ্রি আউটগোয়িং, সাবান কোম্পানীর আয়োজনে ঘসামাজা করা সুন্দরীদের দৈহিক হাসি কিংবা টুথপেস্টের কল্যাণে গায়ক হয়ে উঠা, অথবা এফএম রেডিওতে ঘন্টার পর ঘন্টা রেডিও জকিদের বিশেষ আবেদনময় লেকচারের মোহে আচ্ছন্ন, উত্তেজিত হয়ে থাকার যুগ এখন। তাই মনপুরা দেখে আমরা যতটা না উত্তেজিত হই, টিপাইমুখ শুনে যেন ঠিক ততটাই স্তব্ধ, ঠাণ্ডা হয়ে যায় আমাদের রক্ত, আমরা যারা এই প্রজন্মের, এই সময়ে বেড়ে উঠছি, তাদের। ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ বলাটা এখন যতটা না দায়িত্ববোধের দায় গ্রহণ করে, তার চে’ বেশি সামাজিক স্ট্যাটাস রার ব্যাপার। জাতীয় কবির ভাষায়, “বোনাফাইড বাঙালি ছেলেদের ‘ফল-ইন-লভ’-টাই রপ্ত হয়ে গেছে, লড়ালড়ির ‘ফল-ইন’টা তাদের হয়ে শতাব্দী পূর্বে পিতৃপুরুষেরাই করে গেছেন।” 

২.
আমরা কি তবে উন্নয়ন আর প্রগতির নামে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর সেই যন্ত্রমানবদের যুগে প্রবেশ করছি? আমাদের চাহিদা, পছন্দ, রুচিবোধ, সম্পর্ক সবকিছুই যেন এই যন্ত্রের ঠিক করে দেয়া নীতিতে চলছে। আমরা কেউ মুক্তভাবে ভাবতে পারি না, যেভাবে সে ভাবতে বলে সেভাবেই ভাবি, হাসতে পারি না নিজের মতো, যে ঢঙে সে দেখিয়ে দেয় সে ঢঙেই হাসি, জাগতে পারি না, কাঁদতেও পারি না। এই যান্ত্রিক সভ্যতা আমাদের ভেতর থেকে মানবিকতা কেড়ে নিয়ে আমাদের খালি দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে। আমাদের দেহে এমন গতির সঞ্চার করেছে, যার উত্তরাধিকার আমরা নই। ফলে আমাদের কাছে তা দুর্গতি হয়ে উপস্থিত হয়েছে। 

৩.
চারিদিকে যখন ফ্রি এসএমএস আর চ্যাটিং-ব্লগিং এর জয়-জয়াকার, তখন আমরা মজেছি গল্প লেখায়, কাব্যচর্চায়, মগ্ন হয়েছি সাহিত্যের সৃজনশীলতায়। কারণ সভ্যতার এই যান্ত্রিকতার প্রদোষে হারিয়ে যেতে থাকা মানবিক বোধ-অনুভূতিগুলো কেবল কবিতাই পারে বুঝতে, গল্পই তাদের গতি-প্রকৃতির বর্ণনা দিয়ে সেগুলো আবার দেখিয়ে দিতে পারে। যন্ত্রের ভেতর বন্দী হয়ে থাকা মানুষের সৃজনশীল বোধগুলোকে কেবল সাহিত্যই পারে মুক্তি দিতে।
আমরা যন্ত্রের বিরুদ্ধে নই, যে কোন ধরণের যান্ত্রিকতা, যন্ত্রের বিষম ব্যবহারের বিরুদ্ধে। আমাদের সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে আমরা এই যান্ত্রিকতার, যন্ত্রের জান্তবতার মুখোমুখী হতে চাই, একে মোকাবেলা করতে চাই। সমাজ ও রাষ্ট্র বিমুখ চিন্তাধারাকে আমরা ঘৃণা করি। সমসাময়িক ঘটনাপ্রবাহ আমাদের সবকিছু নিয়েই ভিন্নভাবে ভাবতে উদ্বুদ্ধ করে। আমাদের এই মূহুর্তের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় দাবী- এক. টিপাইমুখ প্রতিহত করা হোক, দুই. এশিয়ান হাইওয়ে বাস্তবায়নে বাংলাদেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকারে বিবেচনা করা হোক, তিন. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা হোক, চার. নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য জনসাধারণের আয়ত্বে আনার ব্যবস্থা করা হোক, পাঁচ. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হোক।

৪.
এ মাসের ৯ তারিখ প্যালেস্টাইনের মাতৃভূমিহারা স্বাধীনতাকামী মানবতার কবি মাহমুদ দারবিশের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। তাঁর প্রতি আমরা বিনীত শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। প্রভোরের প্রথম সংখ্যাটি তাঁকে নিবেদন করছি। একই সাথে প্যালেস্টাইনে ইসরাইলি দখলদারিত্ব ও হত্যাযজ্ঞের উদ্দেশ্যে তীব্র ঘৃণাযুক্ত প্রতিবাদ জানাই।

৫.
পৃথিবীর যত মন্দ আছে, তা ভাল হোক, ভাল হোক ভাল।


বিনীত
সম্পাদনা পর্ষদ

3 comments:

  1. পৃথিবীর যত মন্দ আছে, তা ভাল হোক, ভাল হোক ভাল।

    ReplyDelete
  2. ধন্যবাদ সব্বাইকে।।

    ReplyDelete

পাঠক সংখ্যা

free counters