আমরা সচেতন! আমরা শিক্ষিত!

গ দ্য
আসবাবির রাফসান


পানির পাইপে টপ টপ টপ... শব্দ চলছে তো চলছেই। বাসা অফিস আদালত তো আছেই এমনও দেখা যায় যে, খোদ ওয়াসার গাড়ি চলছে আর এই রাস্তা দিয়ে যে কিছুণ আগে পানিবাহি গাড়ি গিয়েছে তা বোঝানোর জন্য এবং গাড়ি যাতে পথ চিনে ফের ফিরে আসতে পারে সে জন্য রাস্তায় চিহ্ন এঁকে দিয়ে যাচ্ছে। হেতুতে গাড়ির ফিরে আসা হচ্ছে ঠিকই কিন্তু যে জন্য বের হওয়া এবং তার লালন, তা আর পূরণ হচ্ছে না। কত স্থানেই না দেখা যাচ্ছে পানির অহেতুক য় (অপচয় শব্দটা তার ভারিক্কি হারিয়ে ফেলেছে প্রায়)। আমি নিজে যা দেখছি তাতে কি আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টাটা কখনও করে দেখেছি?

বাসার চুলাটা জ্বলছে তো জ্বলছেই, রান্না-বান্না হচ্ছে তো। এই একটু হাতের কাজটা সেরেই  ওটাতে হাঁড়ি চড়াবো, ২০ মিনিট না হয় জ্বললই চুলাটা। মিনিটে ...ঘনমিটার গ্যাস পুড়ছে, ২০ মিনিটে হয় ...ঘনমিটার। সিলিন্ডার আকারে কিনলে তার দাম হতো ...টাকা। টাকা দিয়ে কি আর প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য নিরূপিত হতে পারে... তাহলে আর এত কিছু ভেবে কাজ কী। আর যেখানে ঘন্টার পর ঘন্টা বিনা কারণে বা তুচ্ছ কাপড় শুকাতে গ্যাস পোড়ানো হচ্ছে, তারা কি একটু হৃদয় দিয়ে বিচার করবেন না, প্লীজ? দিয়াশলাই বাঁচাবেন? যার এক একটি কাঠির মূল্য মাত্র ৩ পয়সা! এই গ্যাসই না কোনদিন হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে আমদানি করতে হয় বিধাতায় জানেন!

হায়রে! আমাদের নাকি পানির অভাব, গ্যাস সীমিত। এভাবে ঢাললে আর পোড়ালে পুরো পৃথিবী দিলেও কি এই বাংলাদেশীদের অভাব মিটবে? আমার বাসার পাইপটা একটু নষ্ট হয়েছে- ঠিক করা হয়নি এখনও... হয়ে যাবে। চুলাটা বার বার জ্বালাতে নিভাতে বড় বিরক্ত লাগে তাই জ্বালিয়েই রাখি, ওতে তেমন কি আর তি? আমি তো লেখাপড়া জানা শিতি! সচেতন!! মানুষ!!! দেশের গ্রাজুয়েট নাগরিক!!!

এবার একটু  ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই। এক্ষেত্রে ভিন্ন হলেও বর্তমান সময়কার সবচেয়ে জরুরি যন্ত্রটির প্রসঙ্গে বলব, হ্যাঁ, মোবাইল। এর উপকার আমরা প্রতিনিয়তই উপভোগ করছি, আমি ভিন্নতর কিছু অভিজ্ঞতা তুলে ধরব।
এক. কবিতার মন ভালো নেই। এ নিয়ে সে রবিনকে কম করে হলেও ৫০টা ংসং পাঠিয়েছে, রবিন অবশেষে ১টি ব্যাক করেছে-  “ÒAmar free sms nai, valo theko” কিন্তু এই sms পড়ে কি আর ভালো থাকা যায়? রনকের সাথে ওর ংসং চালাচালি জমে উঠেছে, গত তিন দিনে ওদের ৬০০ করে  sms চালাচালি হয়েছে কিন্তু এখনও ৪৪০০ বাকি। ১৫ দিনের মধ্যেই শেষ করতে হবে, তাই নাওয়া-খাওয়া, পড়া-শুনা, কাস, সবকিছু বাদ দিয়ে ওদের sms চালাচালি চলছে তো চলছেই...

দুই. তানজিলা পড়ছিল, কিছুদিনের মধ্যেই ওর পরীক্ষা... হঠাৎ নিতুর ফোন। পারমিতা-নিতু একসাথেই আছে, মার্কেটে ঘুরতে বেরিয়েছে, ভিন্ন একটা উদ্দেশ্যও আছে। সেই টানে তানজিলা মাকে প্রাইভেটের নাম করে বেরিয়ে গেল। তারা ঘুরছিল-ফিরছিল, কিছু ছেলে তাদের পিছু নিল, তাদের ছবিও উঠিয়ে নিল, এখন অবশ্য এসবে কিছু এসে যায় না, আমরা ভাবি এর বেশি কিছু না হলেই হলো, একদিন সেই বেশি কিছুতেও কিছু এসে যাবে না- আমরা ভাববো, এর বেশি কিছু না হলেই হল...
তাদের অন্য উদ্দেশ্যটি হল আজ পারমিতার ফোনফ্রেন্ড রাব্বি ওর সাথে দেখা করতে আসবে, দু’জনই দু’জনকে দূর থেকে অপরের অলক্ষ্যে দেখে নিয়েছে, পছন্দ হয়েছে, এবার বসল তারা কফি শপে।
জামিল, রোমেল ওরাও রাব্বির সঙ্গে তার ফোনফ্রেন্ড পারমিতা’র সাথে পরিচিত হতে এসেছে। ফ্রি’তে দু’জন যথাক্রমে তানজিলা ও নিতুকে পেয়ে গেল। ওদের তিন জুটি- রাব্বি-পারমিতা, নিতু-রোমেল এবং তানজিলা-জামিল। পারমিতা রাব্বির সাথে কিছুদিন ঘুরলো-ফিরলো, তারপর একসময় অন্য ফোনফ্রেন্ড পেয়ে রাব্বিকে ভূলে গেল, সেও অন্য কাউকে জুটিয়ে নিল। তানজিলা কিন্তু দু’দিন পর ভুলে যাবে তেমন মেয়ে ছিল না- সে জামিলকে পেতে ঘর-বাড়ি সব ছেড়ে ছুড়ে পালিয়ে গেল জামিলের কাছে। জামিল তাকে কাছে টেনে তার সর্বস্ব নিয়ে তাকে মুক্তি দিল। তানজিলা চিরতরে হারিয়ে গেল। নিতু তানজিলার পরিণতি দেখে সাবধান হল। সে রোমেলকে ত্যাগ করতে চাইল। কিন্তু চাইলেই কি হয়? রোমেল তাদের বহু ছবি নেটে ছেড়ে দিল, মোবাইল নাম্বার লিখে দিল বাস, টেম্পু, গণশৌচাগারে। বিরক্তির চূড়ান্ত সীমায় নিতু ঐ সিমখানা বন্ধ করল। কিন্তু রটনা ও ভোগান্তি যা হল আর মানসিক বিড়ম্বনা থেকে সে কি রা পেল?

তিন. জেসান ডাক্তারের চেম্বারে। গান শোনা সেই ছেলেবেলা থেকে। প্রথমে ক্যাসেট প্লেয়ারে ও পরে ভিসিডি প্লেয়ারে শুনত। কিন্তু মোবাইল নেয়ার পর থেকে কানে সারাণ হেডফোন লাগিয়ে গান শোনা (বদ) অভ্যেস হয়ে গিয়েছে। সে জন্যেই তার আজ কানের ডাক্তারের নিকট আগমন। ডাক্তার তার বাবার বন্ধু। তিনবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়ার পর ফোনেই সেগুলো ক্যানসেল হয়েছে। সে ভাবছে এবারে কান ঠিক করা গেলেই হল। গান-টান ভালভাবে শুনতে পারব। অমুক গানটা সুস্থ কানে ভালভাবে শুনতে হবে।

...এর মানে এই নয় যে, ফোনে আমরা কারো সাথে মোটেই কথা বলব না, বন্ধুত্ব হবে না, কিন্তু সবকিছুতেই একটা নিজস্ব যাচাই-বাছাই, ভাল-মন্দ বিচার বিবেচনা হওয়া উচিৎ। মনে রাখতে হবে মানুষ চেনা বড় দায়। আপনি নিজেই কি নিজেকে পুরোপুরি চেনেন? আপনি নিজেই কি সবসময় আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন? তাহলে অন্যের কাছ থেকে সেই আশা করাটা বোকামি নয় কি?

No comments:

Post a Comment

পাঠক সংখ্যা

free counters