দি ন লি পি

আসমা সাদেকা

৩১ মে ২০০৯
আমার মধ্যরাতে ফাঁকা রাস্তা দেখতে খুব ভালো লাগে। রাস্তাটা নির্জন থাকে। ল্যাম্প পোস্টের আলো রাস্তায় পড়ে। জনমানবহীন রাস্তাটা দেখলে অন্য ধরণের অনুভূতি হয়। আজ মধ্যরাতেও আমি রাস্তা দেখার জন্য জানালায় দাঁড়িয়ে ফাঁকা রাস্তা দেখে আনন্দ উপভোগ করছিলাম। হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখলাম। মেয়েটা সুন্দর একটা কামিজ পড়া, খুব ঢং করে হাঁটছে আর দেখে মনে হচ্ছে ভাল পরিবারের শিতি কোন মেয়ে। দূর থেকে মেয়েটাকে দেখতে সুন্দরই লাগছিল। পথে হাঁটতে হাঁটতে মেয়েটা ফুটপাথে বসে গেল। আমি অবাক হলাম, ফুটপাথে কেন বসেছে মেয়েটা! তখন রাত ১:৩০ হবে। মেয়েটা সেখানে বসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই কিছু লোক এলো তার কাছে। কী যেন বলছে আর মেয়েটি হাত নেড়ে না বলছে। তারপর দু’টি রিক্সাওয়ালা আসল, তাদেরও মেয়েটা হাত নেড়ে না বলল। মনে মনে বুঝতে বাকী রইল না মেয়েটা কোন ধরণের। এরপর আরো ৫-৬ জন ছেলে আসল। তাদের সাথে কথা বলার পর, একটা ছেলে ছিল আর বাকিগুলো চলে গেল। মেয়েটা ছেলেটার হাত ধরে হাঁটা শুরু করল। যা সন্দেহ করেছি, তাই। সে কোন স্বাভাবিক মেয়ে না। কোন ধরণের মেয়ে তা সকলেই বোঝার কথা এতণে। একটা ট্যাক্সি আসল। মেয়েটা আর ছেলেটা সেই ট্যাক্সি করে চলে গেল।
মানুষ জীবন ধারণের জন্য কত ধরণের পথ বেছে নেয়, তা আজ প্রত্য প্রমাণ পেলাম। হয়ত মেয়েটির কোন পথ ছিল না তাই জীবিকা নির্বাহের জন্য তাকে আজ এই পথ বেছে নিতে হল।
জীবনটা অনেক বিচিত্র! রাতে ঘুমাতে কষ্ট হল। একটা গান মনে পড়ছে এখন। হায়রে মানুষ রঙীন ফানুস, দম ফুরাইলে ঠুস্। তবুও ভাই কারোরই নাই একটু খানি হুঁশ। হায়রে মানুষ, রঙীন ফানুস...

১ জুন ২০০৯
আর ভাল লাগছে না। আজ মধ্য রাতে রাস্তা দেখার জন্য দাঁড়ালে মেয়েটাকে আবার দেখি। দেখেই মেজাজটা একদম খারাপ হয়ে গেল। সেদিন যা দেখেছিলাম আজ আরো বেশি খারাপ অবস্থা। আজ মেয়েটাকে নিয়ে ১০-১২ জন ছেলে টানাটানি শুরু করল। সবচেয়ে বেশি মেজাজ খারাপ হল, যখন দেখলাম এই ব্যাপারটা মেয়েটা খুব বহলড়ু করছে। শুনলে হয়ত অবাক লাগতে পারে, যে জায়গায় বিগত দুই দিন ধরে আমি এই অপরাধমূলক কাজটি দেখছি তা হল থানা থেকে ঠিক ২০ গজ সামনে। আমার মেয়েটার জন্য একদম মায়া হলো না। ইচ্ছা করছে যদি পারতাম, মেয়েটাকে গিয়ে বলতাম এভাবে বেঁচে না থেকে আত্মহত্যা কর, অনেক ভাল। আমি যেভাবে দূর থেকে এই কাণ্ড দেখছি, আর কেউ কি দেখছে না? আশে পাশে অনেক ঘরই আছে, ওখানে সিকিউরিটি গার্ড আছে। তারা তামাশা দেখছে। উপর থেকে ঐ মূহুর্তের পরিবেশটা বেশ জঘন্য লাগল। শেষে যা হল তা দেখে আমি আর দাঁড়াতে পারলাম না। তার গায়ের ওড়না একটা ছেলে টেনে নিলো আর একটা ছেলে তাকে কোলে তুলে হাঁটা শুরু করল। বাকি সব ছেলে হৈ হৈ করে মিছিলের মত পিছু পিছু যাচ্ছিল। মনের অজান্তে চোখ দিয়ে দু’ফোটা পানি বের হল। কি হবে আজ রাতটায়? আমি তো ফ্যান ছেড়ে বিছানায় আরাম করে ঘুমাব। ১২টা পশু মিলে আজ কোন নরকের আগুন জ্বালাবে তা শুধু ঐ মেয়েটাই অনুভব করবে। সমাজটা এমন কেন? ক্ষুধা মানুষকে এত নিচে নামাতে পারে! আজ মেয়েটা তার দেহ প্রদর্শন করবে শুধু ুধার তাড়নায়। কেউ কি তাকে সাহায্য করতে পারি না? অন্য পথ কি নেই?

৪ আগস্ট ২০০৯
আজ জনকণ্ঠ পত্রিকাটা পড়ছিলাম। ওখানে বিবি রাসেলের উপর এক পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন ছাপানো হয়েছে। হেড লাইন দেয়া আছে-  “আমার সব কাজে ১০০ ভাগ বাংলাদেশ।” তবে পত্রিকায় যে মডেলের ছবি দেয়া ছিল সে পড়া ছিল ওয়েস্টার্ন কাপড়। কাপড়টা তৈরী গামছার। হাতাকাটা হাফ একটা টপস্ এর সাথে গামছার ধুতি পড়া। বিবি রাসেলেরও একটা ছবি আছে। তিনি নিজেও হাতাকাটা একটা ব্লাউজের সাথে খুব ফ্যাশনেবলভাবে গামছার শাড়ি পড়া। ওয়েস্টার্ন কাপড়ে কয়েক টুকরা গামছা লাগালেই বা পুরো কাপড় বাংলাদেশে সেলাই করলেই তা বাংলার সংস্কৃতি হয়ে গেল? তিনি যা লিখেছেন তাতে পুরোটাই ছিল দেশের কথা। পড়ে ভালই লাগলো। তবে তার কথার সাথে পেপারে দেওয়া মডেলের গায়ের পোশাকে কোন মিল খুঁজে পেলাম না। ও ধরণের পোশাক তো বাংলাদেশের সংস্কৃতি নয়। তবে উনি কিভাবে বলতে পারলেন তার কাজে ১০০ ভাগ বাংলাদেশ এবং উনি দেশের সংস্কৃতির জন্য কাজ করেন? তবে তিনি আমাদের গর্ব। তিনি দেশের নামকে আন্তর্জাতিক জগতে অনেক উপরে তুলেছেন। তবে তার কথায় মনে হল যে কোনভাবে গায়ে গামছা জড়ালে বাংলার সংস্কৃতি ফুটে উঠবে। তিনি তার ডিজাইনের মাধ্যমে যেভাবে দেশের সংস্কৃতিকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করেছেন বাস্তবে কি কোন মিল আছে? আমার মনে হয় না।

No comments:

Post a Comment

পাঠক সংখ্যা

free counters