একান্তের সাড়া

এ কা ঙ্কি কা

শারমিন আকতার জুঁই

হাওয়াঃ কি গো, এভাবে আনমনে অপলকভাবে কী ভাবছো? বুঝতে পেরেছি, হয়তো তুমি আমার মিষ্টি শীতল হিমেল হাওয়া ও তার মন ভোলানো অনুভূতির প্রেমে পড়েছো। তাই না!
পথিকঃ (বিস্ময়ের সাথে বলবে) হ্যাঁ, তাই তো! তোমার সুরভিত স্নিগ্ধ অনুভূতি যেন আমার দেহের প্রতিটি কে আলোড়ন তুলে দিয়েছে। কিন্তু তুমি আমায় দেখা দাও না কেন? ধরো না কেন আমার দু’টো হাত?
হাওয়াঃ (হেসে বলবে) আমায় তুমি হাসালে পথিক। আমি তো হাওয়া, প্রকৃতির ও নিয়তির কাছে বাঁধা। কি করে আমি তোমায় ধরা দেবো?
পথিকঃ কিন্তু আমি তো আমার কল্পনার প্রতিটি সময়ে তোমায় পাবার প্রহর গুণছি। ধরা যদি নাই দিতে পারো, তবে তোমার অদৃশ্য স্নিগ্ধতার মোহে আমায় মুগ্ধ করলে কেন? (আকূলতার সাথে)
হাওয়াঃ তোমার কোন প্রশ্নের জবাব আমি দিতে পারবো না। আমি চললাম... হয়তো আর ফিরে আসবো না। (গম্ভীর গলায়)
পথিকঃ দাঁড়াও, এভাবে কিছু না বলে চলে যেও না... যেও না বলছি...
(শোঁ শোঁ বাতাসের শব্দ হবে।)

দিন যায়, রাত পেরোয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা ও শীতের উষ্ণতা পেরিয়ে বসন্ত আসে ধেয়ে। কিন্তু সেই পথিকরূপী মানব আজও সেই অদৃশ্য মানবীর পথ চেয়ে থাকে।
পথিকঃ (আনমনে) বুঝেছি, হয়তো আমারই ভুল হয়েছে। সেই অদৃশ্য মানবীর উপস্থিতি, অনুভূতি সবই আমার কল্পনা ছিল। নতুবা যদি তা সত্যি হতো তবে সে এলো না কেন?
একদিন ঠিক সন্ধ্যার দিকে সুর্য যখন অস্তমিত হতে থাকে, বর্ণিল লাল আভায় যখন আকাশটা ছেয়ে যাচ্ছিল তখনই হঠাৎ কিসের যেন শব্দ হলো। পথিক আজও আনমনে সেই বটবৃরে তলে বসে আছে। কোন কিছুর শব্দই যেন তার কানে লাগেনি। তবুও আচমকা কেন জানি সে এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। হঠাৎ সে থমকে দাঁড়ায়।
পথিকঃ তুমি এসেছো! (আকূল ও প্রাণোচ্ছল কণ্ঠে) মনের গভীর কোণে ঠিকই একটি আশার প্রদীপ জ্বলছিল যে তুমি একদিন আসবে। আমার প্রতীা বিফলে যাবে না। তোমায় আমি দেখতে না পেলেও তোমার সেই সুরভিত গন্ধ আজও আমি অনুভব করতে পারি।
হাওয়াঃ কেন, বলো কেন তুমি আমায় এত ভালবাস? তুমি তো আমায় দেখনি, আমায় চেন না তবে কেন তোমার মাঝে আমায় নিয়ে এত হাহাকার...
পথিকঃ (ব্যাঙ্গ হাসি হেসে) কে বলে আমি তোমায় দেখিনি, হতে পারো তুমি অদৃশ্য কিন্তু আমি আমার মনের রঙ তুলিতে আঁকা ছবিতে মনের চোখ দিয়ে তোমায় দেখেছি, তোমায় অনুভব করেছি। আমি তোমার দেহ নয়, তোমার অদৃশ্য আত্মাকে ভালবেসেছি।
হাওয়াঃ (শান্ত গলায়) হয়তো সে কারণেই আমি আবার তোমার কাছে ছুটে এসেছি।
পথিকঃ (আগ্রহের সাথে) তবে কি তুমি আর যাবে না? থাকবে আমার মনের ছোট্ট ঘরে?
হাওয়াঃ হ্যাঁ। তোমার আকূলতা দেখে বিধাতা আজ আমায় মুক্তি দিয়েছেন। মুক্তি দিয়েছেন আমায় অদৃশ্যতা থেকে। এখন তুমি আমায় সত্যিই দেখতে পাবে...

হাওয়া পথিকের সামনে ঘুরে দাঁড়াবে। স্নিগ্ধ মৃদু আলো দু’জনের মুখে পড়বে। দু’জনের চোখে মুখে খুশির আভা দেখা দিবে, চোখ ছলছল করবে।
পথিকঃ বিধাতা আজ আবার বুঝিয়ে দিলেন, মনের আকূল চাওয়া কখনো মিছে হয় না যদি তা সত্যি হয়। মন থেকে যদি কেউ কিছু পাবার আশায় মনের গহীনে আশার আলোর প্রদীপ জ্বালে তবে বিধাতা তা তাকে উপহারস্বরূপ প্রদান করেন। এই হয়তো বিধাতার মহত্ব...

দু’জনের চোখ থাকবে দূর কোন সীমানায়। ধীরে ধীরে মৃদু আলো দূরে মিলিয়ে যাবে...
     (পর্দা নামবে)

No comments:

Post a Comment

পাঠক সংখ্যা

free counters